মায়ের কলের মতো আবারও বাংলাদেশকে রক্ষায় বুক পেতে দিল সুন্দরবন। TheNewStar24.com TheNewStar24.com প্রকাশিত: ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ, মে ২১, ২০২০ 639 Viewsমো. সোলায়মান শেখ,বিশেষ প্রতিবেদক: সুন্দরবন হুমকির মুখে তবে সুন্দরবন কতবার যে ঘূর্ণিঝড়, ঝড়, প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে বাংলাদেশকে মায়ের কলের মতো বুক পেতে রক্ষা করেছে, তার কোনো হিসাব নেই। গত নভেম্বরেও ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। অত্যন্ত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ থেকে ভূখণ্ডকে (বাংলাদেশ) রক্ষায় এবারও বুক পেতে দিচ্ছে সুন্দরবন। তবে ‘বুলবুলের’ তুলনায় ‘আম্ফানের’ ক্ষেত্রে বাড়তি বিপদ আছে। নভেম্বরে সুন্দরবন অতিক্রম করার সময় বুলবুলের বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। আর আম্ফানের ক্ষেত্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতি থাকবে (আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে) ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার। আম্ফানের এখনও বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ থেকে ২২০ কিলোমিটার। ফলে বুলবুলে সুন্দরবনের যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, এবার তারচেয়ে অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে তুলনামূলকভাবে জানমাল, বাড়ি-ঘরের ক্ষতি বেশি হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। বুলবুলের সময় আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেছিলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তিন দিকেই সুন্দরবন জুড়ে ছিল। সুন্দরবনের কারণে বুলবুলের নিজস্ব শক্তি কমে আসে। আর উপকূল অতিক্রম করতে গিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের দীর্ঘক্ষণ সময় লেগেছে। আর স্থলভাগে গাছ, স্থাপনা দাঁড়ানো থাকে। এগুলোর সঙ্গে সবসময় সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ঘূর্ণিঝড়, বাধা প্রাপ্ত হয়; এ কারণে ওর মধ্যে রিটার্নিং ফোর্সের (বিরোধী শক্তি) কারণে গতি আস্তে আস্তে কমে যায়।’ আম্ফানের বিষয়ে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেছেন, ‘আম্ফানের কেন্দ্র যদি সুন্দরবন হয়, তাহলে তো ওই স্পিডে (১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার) কম ক্ষতি হবে। কেন্দ্র যদি পটুয়াখালী (বা অন্য স্থলভাগ) হয়, তাহলে অনেক ক্ষতি হবে।’ এদিকে আজ বৃস্পতিবার (২১ মে ২০) ভোর ৬টা পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর বলেছে, আম্ফান উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ বিকেল/সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবনের নিকট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ সকাল ৬টায় (২০ মে) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় এবং দ্বিতীয় পক্ষের চাঁদের সময়ের শেষ দিনের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্ত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। SHARES জাতীয় বিষয়: