বাংলাদেশে গৌরবের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-আরিফুল ইসলাম TheNewStar24.com TheNewStar24.com প্রকাশিত: ৩:৩৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৬, ২০২১ 823 Viewsবাংলাদেশ তথা তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতাকামী মানুষদের উপরে বর্বর আক্রমণ করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেইসময়ের শাসক দেশ পশ্চিম পাকিস্তান। পাকিস্তানি সেনার সেই ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর জেরে ঢাকা শহরে চালানো হয় নির্বিচারে গণহত্যা ও জুলুম। ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালের সেই ভয়ঙ্কর রাতের পরের দিন অর্থাৎ ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন। তবে তার আগে রেডিওতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে এই দিনটিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার দিন হিসাবে তিনি উল্লেখ করে যান। তার অবশ্য অনেক আগে থেকেই বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের আগুন ধিকিধিকি জ্বলছিল। তা আরও বিস্তার লাভ করে এই দিনটির পরে। তারপরের দীর্ঘ প্রায় ৯ মাস সময় ছিল বাঙালি জাতির প্রতিরোধের পর্ব। বর্বর পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাত থেকে নিজের দেশকে বাঁচাতে বাংলাদেশি আমজনতা প্রাণপাত শুরু করে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ, সামরিক বাহিনীর বাঙালি সদস্য এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষ দেশকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করতে কয়েক মাসের মধ্যে গড়ে তোলে মুক্তিবাহিনী। গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ চালিয়ে মুক্তিবাহিনী সারাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। এরপরে দীর্ঘ এতমাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, ত্রিশ লক্ষ শহিদের আত্মাহুতি ও লক্ষ লক্ষ নারীর সম্ভ্রম খোয়ানোর বিনিময়ে অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় প্রায় এক লক্ষ পাকিস্তানি সেনা। এই দিনটিকে পৃথিবীর ইতিহাসে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে অভ্যুত্থান ঘটে বাংলাদেশের। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লিগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আওয়ামী লিগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯টি আসন হতে ১৬৭টি আসনে জয়লাভ করে এবং ৩১৩ আসনবিশিষ্ট জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, যার ফলে আওয়ামী লিগই সরকার গঠনের একমাত্র দাবিদার হয়। এদিকে নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টো শেখ মুজিবের পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিরোধিতা করেন। তিনি প্রস্তাব করেন পাকিস্তানের দুই প্রদেশের জন্য থাকবে দু’জন ভিন্ন প্রধানমন্ত্রী। সেই থেকেই শুরু হয় বিরোধ। এর প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। নিজেদের নির্বাচন প্রতিনিধিদের অধিকার আদায়ের দাবিতে সোচ্চার হয়। মুজিবুর রহমান সারা দেশে ধর্মঘটের ডাক দেন। এরপরই ধীরে ধীরে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সামরিক বাহিনী নিয়ে এসে হিন্দুদের নিধন শুরু হয় বাংলাদেশে। পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোরালো হয়ে ওঠে। গ্রেফতার হওয়ার আগে মুজিবুর রহমান ২৫ মার্চ মধ্যরাতে অথবা ২৬ মার্চ ভোরে চিঠি লিখে বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভারত, ভূটানের মতো রাষ্ট্র বাংলাদেশকে সমর্থন করেছিল। সেইসময়ে বাংলাদেশকে আর্থিক, সামরিক ও কূটনৈতিকভাবে ভারত সরকার সাহায্য করছিল। সেই রাগে পাকিস্তান ভারতে হামলা করে বসলে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি শামিল হয়। মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সামরিক বাহিনীর যৌথ আক্রমণের ফলে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনা ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। পথ চলা শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশ। এইবছরই প্রথম ২৫ মার্চের সেই ভয়াবহ দিনটিকে সরকারিভাবে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসাবে পালন করল বাংলাদেশ। SHARES ফিচার বিষয়: