করোনা রোগীর খাদ্য তালিকায় ডাক্টার-নার্স ও স্টাফদের নাম লিপিবদ্ধ!

প্রকাশিত: ৭:৪৭ অপরাহ্ণ, মে ১১, ২০২০
599 Views

নিজস্ব প্রতিবেদক :

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে ভর্তি রোগীদের ভূয়া তালিকা বানিয়ে খাবারের বিল তৈরীর অভিযোগ উঠেছে। আর এসব ভুয়া রোগীর নাম খুঁজতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত খাদ্যের তালিকায় হাসপাতালের কর্মরত ডাক্তার, নার্স ও স্টাফদের নাম বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই তালিকা থেকে বাদ যায়নি স্বয়ং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদার নামও। তার নামও রয়েছে রোগীদের জন্য খবারের তালিকায়। এমনকি করোনার মধ্যে আবাসিকে তেমন কোন রোগী না থাকলেও গত কয়েকদিনের খাদ্য তালিকায় ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ৫০ জনই রোগী ভর্তি দেখানো হয়।

জানতে চাইলে ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আবু হোসেন মোঃ মঈনুল আহসান বলেন, ”এমনটি হয়ে থাকলে সেটি অবশ্যই অনিয়ম। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।”

সুত্র বলছে, দীর্ঘদিন যাবত ঠিকাদারের সাথে যোগসাজস করে ভর্তি রোগীদের ভূয়া তালিকা বানিয়ে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে সংশ্লিষ্টরা। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ভর্তি রোগীদের খাবার সরবরাহে অনিয়মের সুযোগ নেই। যদি কোন অনিয়ম থাকে তবে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে মহামারী করোনা ভাইরাস প্রাদুুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে হাসপাতালে সাধারন রোগীদের ভর্তির হার অন্য সময়ের তুলনায় অনেক কমে যেতে শুরু করে। তবে আবাসিক বিভাগের রোগীদের খাবার সরবরাহের তালিকায় গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহের কয়েকদিনে প্রতিদিন ৫০ জন করে রোগী ভর্তি দেখানো হয়েছে।

অপরদিকে একই তারিখে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তি রোগীদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ওই সময়ের পূর্বে থেকেও ১০দিনে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মোট রোগীর সংখ্যা মাত্র ১৮জন, যাদের অধিকাংশই সাধারন দূর্বলতা জনিত কারনে ভর্তি দেখানো হয়েছে। যার মধ্যে গড়ে প্রতিদিন তিন থেকে চারজন রোগী ভর্তি হয়েছে। তবে আবাসিক বিভাগের খাবার সরবরাহের তালিকায় প্রতিদিন ৫০ জন রোগী ভর্তি দেখানো হয়েছে। যাদের অধিকাংশ নামই পাওয়া গেছে হাসপাতালের কর্মকর্তা, নার্স ও স্টাফের নাম। এমনকি সেই তালিকায় রয়েছে খোদ হাসপাতালের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সায়েমুল হুদার নাম।

অভিযোগ রয়েছে, দীর্ঘদিন যাবৎ সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রোগীদের খাবার সরবরাহে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করে আসলেও কখনোই এবিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বরং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগীতায় অনিয়ম করে আসছে খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। কেননা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগীতা ছাড়া রোগীদের ভূয়া তালিকা তৈরী করা সম্ভব নয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। আর এভাবেই পরষ্পর যোগসাজসে সংশ্লিষ্টরা হাতিয়ে নিচ্ছে বেশ মোটা অংকের টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সায়েমুল হুদা বলেন, ”মূলত হাসপাতালের আবাসিক বিভাগে রোগীদের খাবার সরবরাহের বিষয়টি আবাসিক মেডিকেল অফিসার দেখেন। খাবারের বিলে আবাসিক মেডিকেল অফিসার সাক্ষর করার পরই আমি সেই বিলে সাক্ষর করি। যদি খাবার সরবরাহে কোন অনিয়ম পাওয়া যায়, তাহলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থ্যা গ্রহন করা হবে।

অপরদিকে যোগাযোগ করলে এবিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ নুসরাত জাহান সাথী, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তিনি কোন কথা বলতে পারবেন না।